লিন্ডসে স্ট্রীটের ঐতিহ্যবাহী গ্লোব সিনেমা নতুন রূপে ফিরছে। ২০০৬ তে, কলকাতার দর্শক এই পেক্ষাগ্রহে শেষবার ছবি দেখেছিলেন । ১৮২৭ সে তৈরীর পর থেকে বহুবার হাতবদল হয়েছে। বর্তমানে গ্লোব সিনেমা লিজ নিয়েছেন শতদীপ সাহা । গ্লোবের পথচলা শুরু অপেরা হাউজ রূপে। তখনকার নাম ‘বিজু গ্র্যান্ড অপেরা হাউজ’। ১৯০৬ তে ই এম কোহেন, ওল্ড অপেরা হাউজ কিনে নেন ই এইচ ডুকেসের থেকে। তিনি নতুন নাম দেন ‘গ্র্যান্ড অপেরা হাউজ’। কিছুকাল পরে অপেরা হাউজের রূপান্তর ঘটে চলচ্চিত্র পেক্ষাগ্রহে। ১৯২২ এর ২৩ শে নভেম্বর চলচ্চিত্র পেক্ষাগ্রহ রূপে আত্মপ্রকাশের পর মুক্তি প্রাপ্ত প্রথম ছবি ‘স্পোর্টিং ডাবল’। ১৯২৫ শে গ্র্যান্ড অপেরা হাউজের নাম বদলে হয় গ্লোব সিনেমা। সেই সময়ে কলকাতা শহরে যে গুটি কয়েক জায়গায় ইংরেজি ছবি চলতো, গ্লোব তার মধ্যে অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, এই সিনেমা হল সৈনিকদের বিনোদন জুগিয়েছে।

।। এস এস আর গ্লোবে সৃজিত এবং দেব।।
এই সিনেমা হলে বহু বিখ্যাত বিখ্যাত ছবি মুক্তি পেয়েছে, তার মধ্যে কিছু নাম অনেকেরই খুব চেনা। যেমনঃ ‘বেন হুর’; ‘ম্যাকানাস গোল্ড’; ‘স্টার ওয়ার্স’। পরবর্তী সময়ে মৃণাল সেনের ‘ইন্টার্ভিউ’; ‘কোরাস’ এবং সত্যজিত রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’; ‘ঘরে-বাইরে’ এই হলে দেখানো হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে, ভীষণ জনপ্রিয় ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের ছবিও এই হলে মুক্তি পেয়েছে। এই শতাব্দীর গোড়ার দিকে, প্রিয়া সিনেমার মালিক দুহাজার থেকে দুহাজার ছয় অবধি লিজ নিয়ে গ্লোব সিনেমা চালান।
নতুন করে গ্লোব সিনেমা ফিরছে ‘এস এস আর সিনেমাস’ এর হাত ধরে। শতোদীপ সাহা জানিয়েছেন, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে নতুন করে গড়ে উঠেছে গ্লোব সিনেমা। বর্তমানে ২৪৩ ও ১৯৮ আসন সংখ্যা বিশিষ্ট দুটি পেক্ষাগ্রহ তৈরী হয়েছে। শুধুমাত্র পেক্ষাগ্রহই নয়, সাথে থাকছে ছাদের ফোয়ারা। ফোয়ারার পাশে থাকছে মার্বেলের টেবিলে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও, লাউঞ্জ – বার – স্মোকিং রুম এবং রিটারিং রুম রয়েছে এই পেক্ষাগ্রহে। ‘টু কে’ প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবি দেখানো হবে। পুরোনো প্রজেক্টর ও রাখা থাকবে, অতীতের স্মৃতিকে জিইয়ে রাখার তাগিদে। পুজোর মধ্যে মুক্তি পাচ্ছে ‘টেক্কা’, সেই ছবির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও প্রযোজক-অভিনেতা দেব টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অভিনব প্রচার করেছেন এই হলে এসে। পুজোয় সাধারণ দর্শকদের জন্য দরজা খুলছে ঐতিহাসিক এই পেক্ষাগ্রহের। এস এস আর গ্লোব সিনেমাস, পুরাতন গ্লোব সিনেমার কতটা স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়, তাই এখন দেখার।