সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বাংলা ছবি “ পদাতিক”। ছবিটির বিষয়বস্তু কিংবদন্তি বাংলা চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের জীবন ও তার সমকালীন পরিসর, সর্বোপরি বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান। গত ১৪ই আগষ্ট মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ছবিতে প্রত্যেকের অভিনয় প্রশংসনীয়। মৃণাল সেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তার অভিনয় সত্যিই চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রে অভিনেত্রী মনামী ঘোষের অভিনয় ও নজর কাড়ে। তবে সত্যজিৎ রায়ের আদলে মানিক্য রায়ের চরিত্রে জিতু কামালের অভিনয় অসাধারণ। এছাড়াও বাকিদের অভিনয় ও যথাযথ। তবে পরিচালক যেভাবে মৃণাল সেনের জীবনশৈলী পর্দায় তুলে ধরেছেন,তারও প্রশংসা না করে পারা যায় না। আলাদা করে বলতে হবে কিশোর মৃণাল সেনের চরিত্রে কোরক সামন্তের কথা। সঙ্গে বলতে হয় মেক আপ ম্যান সোমনাথ কুণ্ডু র কথা। সে মৃণাল সেন থেকে মানিক্য রায়ই হোক কিংবা উত্তম কুমার থেকে অমিতাভ বচ্চন , প্রতিটি চরিত্রকে যেন জীবন্ত করে তুলেছেন তার হাতের দক্ষতায়।
ছবির অন্যতম নজরকাড়া বিষয় হলো গান। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে গান যে এক আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে ওঠে, এ বিষয় সবারই প্রায় জানা। পদাতিকেও তার অন্যথা হয়নি। বিশেষ করে সোনু নিগম এবং অরিজিত সিংয়ের গাওয়া “তু জিন্দা হে” গানটি খুবই নজর কাড়ে। এছাড়াও রুপঙ্কর বাগচির গাওয়া “ ও আলোর পথযাত্রী” গানটি ছবিকে এক অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়। সবশেষে কবির সুমনের গাওয়া গান “জনতার হাতে হাত “গান টি যেন আদতেই ছবির প্রতিফলক হয়ে ওঠে। তবে সাহানা বাজপেয়ীর গাওয়া “সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে” গানটি যে মুহূর্তে আসে,তা দর্শকের চোখে জল আনতে বাধ্য করেছে।
ছবির চিত্রনাট্যও প্রশংসনীয়। যেভাবে চিত্রনাট্যের মাধ্যমে ছবির বুনন করেছেন পরিচালক,তা প্রশংসা যোগ্য। বিশেষ কিছু দৃশ্যে সত্যিই চিত্রনাট্যের কারণে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে। মৃণাল বাবুর সঙ্গে মাণিক্য বাবুর কথোপকথনের সংলাপ ছবিকে যেন একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও মৃণাল সেন এবং তাঁর স্ত্রী গীতা সেনের কথোপকথনও খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। আলাদা করে বলতে হবে ছবির কিছু দৃশ্যর কথা। মৃণাল সেনের জীবনের কিছু পর্যায় যেমন তার জীবনের ওঠাপড়ার ঘটনা,প্যারাডাইস ক্যাফের সেই বিখ্যাত আড্ডার দৃশ্যগুলি পর্দায় খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। তবে, ছবির সময়সীমা যেন আর কিছুটা বেশি হলে ভালো হতো বলে মনে হয়। মৃণাল সেনের মতো কিংবদন্তি পরিচালককে নতুন প্রজন্মের কাছে নতুনভাবে উপস্থাপনার যে প্রয়াস তা এককথায় অনবদ্য।